গফরগাঁওয়ে চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা
আটক ১, বাড়িতে আগুন
পাগলা ও গফরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার গয়েশপুর বাজারে বিএনপি নেতা হোমিও চিকিৎসক হারুন অর রশিদকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে রুবেল মিয়া নামের এক ব্যক্তি। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা বাড়ি ঘেরাও করে রুবেল ও তার মা বিউটি আক্তারকে পিটুনি দিয়ে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাগলা থানা পুলিশ চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। হারুন অর রশিদ গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার পাইথল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্মসাধরণ সম্পাদক এবং বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক। গয়েশপুর বাজারে ‘ফিরোজা হোমিও হল’ নামে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি পাইথল ইউনিয়নের গোয়ালবর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। গয়েশপুর বাজারের সনি সিনেমা হল রোডে নিজস্ব তিনতলা বাড়িতে তিনি বসবাস করতেন।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালে রুবেল গয়েশপুর বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করেন নিহত হারুন অর রশিদের ছোট ভাই তৎকালীন পাইথল ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি কামরুল মেম্বারকে। এ ঘটনায় মামলা হয়। মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন নিহত বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে হারুন তার ফিরোজা হোমিও হলের সামনে কামালের স্টলে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় রুবেল রামদা নিয়ে হারুনের ওপর হামলা চালান। আত্মরক্ষার্থে হারুন তার বাসার দিকে দৌড় দেন। সনি সিনেমা হলের সামনে গিয়ে তিনি পড়ে যান। সেখানেই রামদা দিয়ে কুপিয়ে, গলা কেটে হারুনের মৃত্যু নিশ্চিত করে সদর্পে গয়েশপুর বাজারে তার বাসায় চলে যান রুবেল। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা ঘাতক রুবেলের বাড়ি ঘেরাও করে। আত্মরক্ষার্থে রুবেল তার নিজ বাড়িতে আগুন দেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা রুবেলকে ধরে পিটুনি দেন। রুবেলের মা বিউটি আক্তার রুবেলকে বাঁচাতে এলে তিনিও পিটুনির শিকার হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পাগলা থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রেণে আনতে চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।
নিহত হারুন অর রশিদের স্ত্রী পাইথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফেরদৌসি বেগম বলেন, রুবেল প্রায় সময় আমার স্বামীকে হুমকি দিত-তোর ভাই তো বেঁচে গিয়েছিল; কিন্তু তোকে জানে মেরে ফেলব। হারুনের ছেলে দীপ্ত চিৎকার করতে করতে বলে, আমার বাবার খুনি রুবেলের ফাঁসি চাই।
পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাশার জানান, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদী পৈশাচিকতার আরেকটি বর্বর দৃষ্টান্ত-বিএনপি : ময়মনসিংহের পাগলা থানার পাইথল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. হারুন অর রশিদকে কুপিয়ে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির আহ্বান জানিয়েছে দলটি। সোমবার এক বিবৃতিতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হারুন অর রশিদকে কুপিয়ে হত্যা দেশজুড়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী পৈশাচিকতার আরেকটি বর্বর দৃষ্টান্ত। আওয়ামী লীগ যে মানবিকবোধশূন্য রাজনৈতিক দল, এর বহিঃপ্রকাশ ঘটল তাকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যার মাধ্যমে। হত্যা, গুমের সংস্কৃতি তৈরি করে আওয়ামী লীগ অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে চাচ্ছে। দেশে রক্তাক্ত জনপদ ছাড়া জনগণকে তারা আর কিছুই দিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠানের পর জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদী জনগণকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য গ্রামগঞ্জ-শহর-নগরে রক্ত ঝরাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নানা এজেন্ডার মধ্যে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা একটি অন্যতম এজেন্ডা। ভোটারশূন্য নির্বাচন করে তাদের ফ্যাসিবাদী চেহারা আরও হিংস্ররূপ ধারণ করেছে। এর সর্বশেষ শিকার হলেন আওয়ামী সন্ত্রাসী রুবেল কর্তৃক ডা. হারুন অর রশিদকে হত্যা। তবে এভাবে হত্যা ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে আওয়ামী লীগ আর টিকে থাকতে পারবে না, প্রতিটি নির্মমতা ও হত্যাকাণ্ডের জবাব জনগণ একদিন কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে নেবে।’
